শুদ্ধ চেতনার শৈল্পিক প্রকাশের নাম সাহিত্য। একটি সৃশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ সমাজে সাহিত্য-চেতনার উন্মেষ ঘটে সংবেদনশীল সামাজিক সম্পর্ক এবং ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটকে হৃদয়ে ধারণ করে। কখনো যে সাহিত্য মনন দ্রোহী হয়ে উঠে বিচ্যুতিকে বিদূরিত করে সার্বজনীন সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে। কিন্তু সদ্ভবত একথা অধিক সত্য যে, মা-মাটি-মানুষের নিবিড় সাহচর্য এবং কৃষ্টি-সংষ্কৃতি ও ঐতিহ্যের বেদীমূলেই ভিত্তি রচিত হয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়া কর্মের। এদিক থেকে আমিরগঞ্জবাসী সত্যি ভাগ্যবান। শত শত বছর ধরে বিরাজমান এখানকার সামাজিক সুস্থির পরিবেশ ও শিক্ষা উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সমাজে শিক্ষিত সজ্জনের হার বাড়ার পাশাপাশি জন্ম নিয়েছে বহু সংখ্যক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তাদের কৃতকর্ম গন্তি পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ধীরে ধীরে আগুয়ান হচ্ছে। আমিরগঞ্জ ইউনিয়নে জন্মলাভকারী সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের কর্মের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নোক্ত নিবন্ধে অনুচয়ন করা হলো।
আজিজুল হাকিম: একান্ত ভাবেই নিভৃতচারী কবি আজিজুল হাকিম। জন্ম ১৯০৮সালে, আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের হাসনাবাদ গ্রামে। তাকেঁ নির্দ্বিধায় ইউনিয়নের অন্যতম কবি বলা যায়। প্রখ্যাত সাংবাদিক ও নজরুল ধারার এ কবি আদিয়াবাদ মোসলেক হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালে তাঁর প্রথম কবিতা 'আয়না যুই; মাসিক সবুজ পল্লী পত্রিকায় ছাপা হয়। ১৯৩১ সালে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আদিয়াবাদ হইস্কুলের বার্ষিক পুরষ্কার বিতরণী সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতকালে আজিজুল হাকিম কবিতার খাতা হাতে ড. শহীদুল্লাহর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সভায় তাঁর বক্তৃতা ও কবিতা পাঠ শুনে ড. শহীদুল্লাহ বিশেষ প্রীত হয়ে দারিদ্রপীড়িত আজিজুল হাকিমকে ঢাকায় নর্মাল স্কুলে পড়ার সুযোগ করে দেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ বজ্রবীণা, ভোরের সানাই (১৯৫৬), পথহারা (১৯৩৬), ঘরহারা (১৯৩৭), মরুসেনা (১৯৬৩), বিদগ্ধ দিনের প্রান্তর (১৩৪০), আজাজিল নামা (১৯৫৬), রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ (অনুবাদ ১৩৫৫), মরু দুলাল, সঞ্চয়ন (শ্বরচিত কবিতা সংকলন ১৯৫৪, ঝড়ের রাতের যাত্রী (১৯৫৯)। আজিজুল হাকিমের জীবন দক্ষ সাংবাদিকতার উজ্জল বৈশিষ্ট্যে ছিল ভাশ্বর। তিনি নারায়ণগঞ্জ, থেকে প্রকাশিত 'সবুজ বাংলা' ও পল্লী সামাচার, পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক ছিলেন। ১৩৫৪ সাথে ঢাকা থেকে নব পর্যায়ে প্রকাশিত পাক্ষিক 'নওরোজ' তিনি সম্পাদনা করতেন। তিনি কবি নজরুলের পরিত্যক্তা স্ত্রী নার্গিস খানমকে বিয়ে করেছিলেন। ১৯৬২ সালে ঢাকায় কীর্তিমান কবির মৃত্যু ঘটে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস